ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪ বিডি ডেক্সঃ ফুটবল মহোৎসব তো আর এমনি এমনি বলা হয় না। চার বছর পর ৩২টি দেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই মহাযজ্ঞ। আবেগও জড়িয়ে থাকে তাতে। তাই বিশ্বকাপ ফুটবল মানে উৎসবের আরেক নাম। উৎসবে শামিল হতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো মরুর বুকে আসতে শুরু করেছে। দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাই বাড়তি ব্যস্ততা দেখা গেলো। সেখানে নেমেই চোখে পড়লো বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বকাপকে ঘিরে নানা ব্র্যান্ডিং। হবেই না কেন? বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় উৎসবকে যে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষা।
দুদিন পরই ১১ হাজার ৫৮১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। সবাই উৎসবের অপেক্ষায় থাকলেও কোথায় যেন একটু সুর কেটে যাচ্ছে মনে হলো। সমর্থকদের ভিড়টা সেভাবে চোখে পড়লো কমই! যদিও কাল রাতে কিছু সমর্থককে হই-হুল্লোড় করে বিমানবন্দর ছাড়তে দেখা গেছে। যদিও বিশ্বকাপ মাঠে গড়াতে দুটি দিন এখনও বাকি। তাই হয়তো বড় রকমের জমায়েতটা হতে দেরি। আরেকটি বিষয়ও এখানে উল্লেখযোগ্য। কাতার প্রায় ২৯ লাখ জনসংখ্যার দেশ হলেও এখানে অভিবাসী কিন্তু কম নয়। যার বড় অংশজুড়ে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। তারপরও কাতার কিন্তু তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
২৯ দিনব্যাপী ফুটবল মহোৎসবের জন্য নানান স্তরের সমর্থকদের আমন্ত্রণ জানানোর অপেক্ষায় ৮টি স্টেডিয়াম। অবশ্য যারা নিরলস পরিশ্রম করে কাতারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষোভও রয়েছে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ৮টি স্টেডিয়াম নির্মাণের পেছনে যাদের অবদান অনেক, সেই শ্রমিকদেরই কিনা দোহা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে! তাই কাতারিদের কাছে এই বিশ্বকাপ নিয়ে প্রবল উন্মাদনা থাকলেও প্রবাসী অনেকের কাছে তা কিছুটা বিষাদের! এমনটা দাবি করে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে আসা রফিকুল ইসলাম ট্যাক্সি চালাতে চালাতে বললেন, ‘কাতারে বিশ্বকাপ নিয়ে কাতারিদের অনেক উত্তেজনা। প্রবল আগ্রহ। কিন্তু আমাদের অনেকেরই মন বেশ খারাপ। দোহা থেকে কোনও শ্রমিককেই এখানে রাখা হয়নি। আমাদের দোহার বাইরে গিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। অথচ আমাদের অনেকে বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম নির্মাণে সরাসরি যুক্ত ছিল।’
অবস্থা এমন, দোহায় ট্যাক্সি চালিয়ে রাতে আবার শহরের বাইরে গিয়ে রফিকুলদের থাকতে হচ্ছে। তারপরও বিশ্বকাপ ফুটবলের শহরে আছেন, এটাই তাদের কাছে এখন বড় বিষয়। মেসি-নেইমার-রোনালদোদের লড়াই যে এই ৮টি মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে দুই হট ফেভারিট দল নিয়ে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রীতি ম্যাচ খেলে ৯০০ কেজি মাংস নিয়ে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দোহায় পা রেখেছে। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল আসবে বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন। বাকিরাও আসতে শুরু করেছে শীতকালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আমেজ গায়ে মাখতে। তবে শীতকাল চলে এলেও দোহার।
অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করল কাতারঃ আর মাত্র দুই দিন বাকি বিশ্বকাপের আসর। এবার ফুটবল বিশ্বকাপে আট ভেন্যুতেই বিয়ার বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে কাতার।রোববার পর্দা উঠবে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের। দীর্ঘ এক দশক ধরে যার প্রস্তুতি নিচ্ছে কাতার। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের।আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশনের (ফিফা) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে চলা বিতর্কের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নিল কাতার।প্রাথমিকভাবে স্পন্সর বুডওয়েজারকে বিশ্বমঞ্চের ভেন্যুগুলোতে বিয়ার বিক্রির অনুমতি দেয় ফিফা। তবে সেই সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিয়েছে কাতার। আগে থেকেই এ অবস্থানে ছিল মুসলিম অধ্যুষিত দেশটি।
কাতারের ডেলিভারি ও লিগ্যাসি সংক্রান্ত সুপ্রিম কমিটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য আতিথেয়তা ভেন্যুগুলোর বাইরে নির্ধারিত ‘ফ্যান জোনে’ অ্যালকোহল পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্য কোথাও মিলবে না।গত সেপ্টেম্বরে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকরা স্টেডিয়াম ও ফ্যান জোনে ফুটবল অনুরাগীদের জন্য অ্যালকোহলসহ বিয়ার পরিবেশনের নীতি চূড়ান্ত করে।
কাতারে বিলাসবহুল আন্তর্জাতিক হোটেল কিংবা রিসোর্টের সঙ্গে যুক্ত নয়- এমন সব রেস্তোরাঁয় অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিদেশি নাগরিকরা দেশটির রাজধানী দোহার উপকণ্ঠে কাতার এয়ারওয়েজ-চালিত একটি ডিপো থেকে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য মদ, বিয়ার ও ওয়াইনের বোতল কিনতে পারেন।এর আগে ১৯৮৬ আসরের ভেন্যুতেও মাদক নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৪ বিশ্বকাপেও তাতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। অতীতে বৈশ্বিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজকরাও এক্ষেত্রে সফল হয়েছে।
খোলামেলা পোশাক পরলে জেল-জরিমানাঃ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ উপভোগ করতে হবে বিদেশি দর্শকদের। মদ্যপানে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। প্রেমিক-প্রেমিকা হোটেলের এক রুমে রাত যাপন করতে পারবেন না। রাতভর পার্টিতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। খোলামেলা পোশাকে যাওয়া যাবে না জনসম্মুখে। বৃটিশ দৈনিক ডেইলি স্টারের খবর, কাতার বিশ্বকাপে খোলামেলা পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন আচরণের বিপরীতে রয়েছে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারে বিদেশি নারী সমর্থকরা খোলামেলা পোশাক পরতে পারবেন না। নির্দিষ্ট কোনো ড্রেসকোড দেয়নি কাতার সরকার। তবে নারীদের ন্যূনতম কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে।দর্শকদের পোশাকের ওপর নজরদারি করতে স্টেডিয়ামের ভেতর ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেইলি স্টার। কাতার বিশ্বকাপের চিফ টেকনোলজি অফিসার নিয়াস আব্দুর রহমান বলেন, ‘স্টেডিয়ামে আমরা অত্যাধুনিক ক্যামেরা বসিয়েছি।
সেই ক্যামেরার সাহায্যে গ্যালারির প্রতিটি চেয়ারে ভালোভাবে নজরদারি করা সম্ভব। সবকিছুই রেকর্ড করা হবে। তাতে প্রয়োজনে আমরা রেকর্ডিং দেখতে পারব। দর্শকদের পোশাকের দিকে নজর রাখা হবে।’শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, পোশাকজনিত নিয়ম রয়েছে পুরুষ দর্শকদের জন্যও। খালি গায়ে স্টেডিয়াম কিংবা জনসম্মুখে চলাফেরা করতে পারবে না পুরুষ দর্শকরা। কমপক্ষে স্লিভলেস টি-শার্ট পরতে হবে তাদের। আইন অমান্য করলে ২৪০০ পাউন্ড বা প্রায় ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে জেলের সময়সীমা জানানো হয়নি।ফিফার ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘নারীরা ইচ্ছে মতো পোশাক পরিধান করতে পারবেন। তবে জনসম্মুখে যেমন মিউজিয়াম এবং সরকারী দপ্তরে গেলে কাঁধ ও হাঁটু ঢাকা কাপড় পরতে হবে।’
২০ বছরে ‘সবচেয়ে দামি’ টিকিটঃ কাতার বিশ্বকাপে টিকিটের পেছনে গত ২০ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হবে দর্শকদের। ২০১৮ সালে হওয়া রাশিয়া আসরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি দাম দিতে হচ্ছে প্রতি টিকিটের জন্য। জার্মানির মিউনিখভিত্তিক খেলাধুলার সংবাদ মাধ্যম কেলার স্পোর্টসের এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা গেছে। এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট গড়ে ৬৮৪ পাউন্ড করে কিনতে হচ্ছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচের টিকিটে গড়ে ২১৪ পাউন্ড খরচ হয়েছিল দর্শকদের। এবারের আসরে সেটি বেড়ে হয়েছে গড়ে ২৮৬ পাউন্ড। কেলার স্পোর্টসের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২০ বছরের মধ্যে কাতার বিশ্বকাপের টিকিটই সবচেয়ে বেশি খরুচে। সবশেষ আসরের ফাইনালের চেয়ে এবারের ফাইনালে ৫৯ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হবে টিকিট, দাবি করা হয় সমীক্ষায়। যদিও এ বিষয়ে ফিফার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছিল, কাতার বিশ্বকাপের প্রায় ৩০ লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
সমীক্ষায় জানা গেছে, গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী টিকেট ছিল ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে। সেবার প্রতি ম্যাচের টিকিটের গড় মূল্য ছিল ১০০ পাউন্ড। বার্লিনে হওয়া ফাইনালের প্রতি টিকিটের জন্য জন্য গড়ে ২২১ পাউন্ড গুনতে হয়েছে দর্শকদের।
(সুত্রঃ বাংলা পত্রিকা ইউ এস এ।)