ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪ বিডি ডেক্সঃ শিগগিরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসছে ‘ডিজিটাল ডলার’। ডিজিটাল মুদ্রা তৈরির মার্কিন ট্রেজারির প্রচেষ্টা অত্যাসন্ন- এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
গত ১ মার্চ বুধবার ট্রেজারির ডোমেস্টিক অর্থ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি নেলি লিয়াং এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থে কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল ডলারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়- এজন্য ট্রেজারি ‘প্রযুক্তিগত উন্নয়নে’ মনোনিবেশ করছে।
বৈদেশিক নীতি বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের জিও-ইকোনমিক্স সেন্টার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লিয়াং একথা বলেন।
‘ডিজিটাল ডলার’ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা (সিবিডিসি) যে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাস্তবতা হতে পারে, এর পক্ষে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সংকেত।
ডিজিটাল ডলার কী?
‘ডিজিটাল ডলার’ বা সিবিডিসি হলো সরকার-সমর্থিত একটি ডিজিটাল মুদ্রা। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ জানায়, এটি এমন কিছু যা ঠিক নগদের (ক্যাশ) মতো সাধারণ জনগণের কাছে সহজলভ্য।
ফেড আরও জানায়, কয়েক দশক ধরে ডিজিটাল ফরম্যাটে অর্থ থাকা সাধারণ ব্যাপার হলেও সিবিডিসি ‘সাধারণ জনগণের কাছে থাকা বিদ্যমান ডিজিটাল অর্থ থেকে আলাদা। কারণ সিবিডিসি হবে ফেডারেল রিজার্ভের দায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নয়।’ এটি ক্যাশের মতো কাজ করতে পারে।
চীন সরকার ২০২০ সালে সর্বজনীনভাবে ডিজিটাল মুদ্রা পরীক্ষা শুরুর পর সিবিডিসি ধারণাটি সামনে আসে। এমনকি ২০২০ সালে এটি করোনা মহামারি স্টিম্যুলাস বিলেও সংক্ষিপ্ত আকারে আসে।
লিয়াং বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ও অন্যান্য গ্রুপের সহযোগিতায়, বিশেষ করে গোপনীয়তা, জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় ডলারের ভূমিকার মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে সিবিডিসি কেমন হতে পারে তা নির্ধারণের জন্য মার্কিন ট্রেজারির একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে।
২০০৯ সালে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা (ক্রিপ্টোকারেন্সি) হিসেবে বিটকয়েনের সূচনা ঘটে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির অনলাইন মূল্য থাকলেও কোনো সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা নিয়ন্ত্রণ করে না। তাই ডিজিটাল ডলার এই ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আলাদা। কারণ এটি কেউই মাইনিং করতে পারে না।
ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোমে পাওয়েল ডিজিটাল ডলার তৈরির বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টির সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করছে ফেড। আমরা মনে করি এটি কিভাবে কাজ করবে এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন হবে ইত্যাদি আগে বোঝা আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ফেড একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করছে, এমনকি ডিজিটাল ডলার কেমন হবে তার ডিজাইনও তৈরি করছে। এর প্রভাব পুরোপুরি বুঝা গেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া কিংবা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
সিবিডিসি কী?
সিবিডিসি হচ্ছে এমন একটি মুদ্রা, যেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অনুমোদন দেবে এবং তারাই লেনদেন তত্ত্বাবধান করবে। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ৮০ শতাংশই এ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জাপান অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এবং এমআইটি যৌথভাবে সিবিডিসি নিয়ে গবেষণা করছে হ্যামিলটন প্রকল্পের মাধ্যমে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল মুদ্রা কিভাবে কাজ করবে এবং এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন, তা নিরূপণ করা।
বিশ্বের ৬৫টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর জরিপ চালিয়ে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস) জানায়, ৮৫ শতাংশ ব্যাংকই সিবিডিসি নিয়ে কোনো না কোনোভাবে কাজ করছে। ১৫ শতাংশ এ নিয়ে গবেষণায় পাইলট প্রকল্পে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে চীনের ২৮ শহরে পরীক্ষামূলক ব্যবহার হচ্ছে এ মুদ্রা। স্থানীয় মুদ্রা ইউয়ানের ডিজিটাল সংস্করণ ডিসিইপি (ডিজিটাল কারেন্সি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) চালু করেছে। পরীক্ষামুলক এ প্রকল্প ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। ডিজিটাল এ মুদ্রার নাম দেয়া হয়েছে ‘ই-সিএনওয়াই’।
গত বছর বাহামা দ্বীপপুঞ্জ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল মুদ্রা ‘সেন্ড ডলার’ চালু করে। ব্রিটেনও নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা আনার পথে হাঁটছে। যার সম্ভাব্য নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রিটকয়েন’।