ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪ বিডি ডেক্স: আউটডোর-ইনডোর প্যাথলজি, ব্লাড ব্যাংকের সক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও টিকেট কাউন্টার ৬টি থেকে ১৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। তাতে কমেছে রোগিদের ভোগান্তি ছাড়াও অপেক্ষার সময়কাল। এছাড়া নানান উন্নয়নমূলক কাজে চিকিৎসা সেবার গতি আরো বেগবান হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত কয়েক বছরে নানান উন্নয়নমূলক কাজ শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অনেকগুলো কাজ চলমান রয়েছে। যার সবগুলোর সুফল ভোগ করছে উত্তরের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা সেবা প্রত্যাশীরা।
প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক রোগির সেবা নেয় হাসপাতালের আউটডোর বিভাগে। সেখানে টিকিট কেটে রোগিরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের থেকে পরামর্শ নেয়। এছাড়া ২৪ঘন্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে থাকে ইনডোর (জরুরি বিভাগ)। অতীতের তুলনায় সেবা প্রত্যাশীরা চিকিৎসা ভালো পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন রোগি ও তাদের স্বজনরা।
কর্তৃপক্ষ বলছেন- উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। আগামিতে আরো কাজ হবে। সবমিলে আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে বেশির ভাগ কাজ শেষ হবে। তাতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান আরো উন্নত হবে। শয্যার বিপরীতে অতিরিক্ত রোগি, সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অন্তরায়। হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণেই বেড সংখ্যার অধিক রোগি ভর্তি করতে হচ্ছে। ১২০০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রায় ২৭০০ রোগি সেবা নিচ্ছে।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে ষাটোর্দ্ধ নারী ড্রেনের পাশে বসে নিজের খাওয়ার জন্য পান প্রস্তুত করছেন। তিনি জানান, ‘ড্রেনের পাশে হলেও গন্ধ নেই। একটা খেলাম; দুইটা বানিয়ে রাখছি পরে খাব।’
আরেক রোগির স্বজন মনি মিঞা জানান, ‘শহরে বাড়ি হলেও রামেক হাসপাতালে তেমন আসা হয় না। নিজের বা স্বজনদের প্রাইভেট ক্লিনিকেই চিকিৎসকদের দেখাই। তবে হার্টের সমস্যার কারণে আত্মীয়কে ভর্তি করি। ভর্তির পরে ভেতরে ঢুকে আমি অবাক হয়েছি; কারণ হাসাতালে যে দূর গন্ধ ছিলো সেটি নেই। পুরো হাসাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। অনেকটাই ক্লিনিকের মতো।
তিনি বলেন, রোগি বেশি হওয়ায় চিকিৎসা পেতে ধীর গতি। তবে ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা ভালোই চিকিৎসা দিচ্ছেন। একসময় হাসাতালটিতে ঢুকতেই দুর্গন্ধ লাগতো। এখন ড্রেনগুলোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকায় দুর্গন্ধ দূর হয়েছে।’
এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আনসার সদস্যদের কাজ করতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, যানবাহনের জটলা দূর করতে চালকদের চলাচলের রাস্তা নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে জরুরি বিভাগ যানজটমুক্ত থাকে।
হাসপাতালের ড্রেন, ওয়ার্ডগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখা গেছে। হাসপাতালের ভেতরে গোসল খানার সাথে টয়লেট (২টা মহিলা, ২টা পুরুষ) নির্মাণের কাজ করতে শ্রমিকদের দেখা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে হাসপাতালে মডার্ন লেবার রুম বাড়ানো, হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে নানা রকম উদ্যোগ, দালাল দূরীকরণ, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগি ও রোগির ভোগান্তি দূর করতে নানা রকম সাইনবোর্ডের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা, প্যাথলজির সক্ষমতা বৃদ্ধি, করোনা ওয়ার্ড, হাসপাতালের নিজস্ব অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া চলমান রয়েছে- হাপাতালের ইমারজেন্সি ও ক্যাজুয়ালিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি, মডার্ন মরচ্যুয়ারি, গাইনি আউটডোর, দর্শনার্থী গোসলখানার সাথে টয়লেট (২টা নারী, ২টা পুরুষ) ৪০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ভবন দুই তলা আছে যা ছয়তলা করা হচ্ছে, বাগানের সৌন্দর্য বর্ধন, হাসপাতালের সৌন্দর্য বর্ধন, ১০ তলা বিশিষ্ট ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ ডিপার্টমেন্ট, রেডিওলজি এক্সটেনশন, স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাব স্টেশন (৫৫০ KVA), পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য অ্যাপ্রন ড্রেন।
এছাড়া ক্যাজুয়ালটি এক্সটেনশন, বজ্রনিরোধক স্টেশন, সার্জারি ও গাইনি বিভাগীয় প্রধানের অফিস মর্ডানাইজ করা, প্রশাসনিক ভবনের ফ্লোর ও ওয়াল টাইলস পরিবর্তন, তিনটা ক্যাবিনের দরজা চেঞ্জ করা, প্রশাসনিক ভবনের দরজা জানালা পরিবর্তন, তিন তলা বিশিষ্ট গাইনি ওটি ও হাসপাতালের সামনের অংশ সৌন্দর্য বর্ধনে রঙ করা হয়েছে।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রি.জে শামীম ইয়াজদানী জানান, উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে; কিন্তু অনেক কাজ বাকি আছে। উন্নয়নমূলক প্রজেক্টগুলো নিয়ে আসা হচ্ছে। সেগুলোর কাজও চলমান রয়েছে। আগামি দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ হবে। বর্তমানে হাসপাতালে ৯০ শতাংশ রোগের পরীক্ষা হয়।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে ১০ তলা বিশিষ্ট ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ ডিপার্টমেন্টের বিল্ডিং হবে। এই হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থা থাকবে। ৪০ শয্যার আইসিইউ এর কাজ শেষ পর্যায়ে। হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির জনবল সঙ্কট রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪ বিডি ডেক্স